তুমি শীলমীমাংসা জাতকের যে যে উপদেশের/মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ, তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি তোমার পরিবারে সদস্য/সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
প্রত্যুৎপন্ন বস্তু: বুদ্ধ জেতবনে অবস্থান করার সময় কোশলরাজকে উপদেশ দেওয়ার জন্য এ কাহিনি বলেছিলেন। কোশলরাজ একসময় ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে রাজকাজে উদাসীন হয়ে পড়েন। ধর্মাচার এবং বিচারকাজ করতেন না, এমনকি বুদ্ধের উপাসনার কথাও ভুলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন বুদ্ধের কথা মনে পড়লে তিনি বুদ্ধকে প্রণাম করতে আসেন। রাজা বুদ্ধকে বন্দনা করে তাঁর উপদেশ প্রার্থনা করেন তাঁর উপদেশ প্রার্থনা করলে সর্বজ্ঞ বুদ্ধ রাজাকে বলেন, রাজকাজে অবহেলা করা উচিত নয়। রাজাদের প্রজাবৎসল হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া, রাজা ধার্মিক হলে রাজপুরুষেরাও ধার্মিক হন। রাজ্যে নিরন্তর শান্তি বজায় থাকে। অতীত কালের কোনো কোনো রাজা দশধর্ম পালনসহ রাজ্য শাসন করে মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয়েছিলেন। কোশলরাজ সে রাজার কথা শোনার জন্য প্রার্থনা করলে বুদ্ধ কাহিনিটি বর্ণনা করলেন।
অতীতবস্তু: অনেক দিন আগে বারানসী রাজ্যে ব্রহ্মদত্ত নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। সে সময় বোধিসত্ত্ব ব্রহ্মদত্ত রাজার পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নামকরণ করা হয় জনসন্ধ। বিদ্যাশিক্ষার বয়স হলে তাঁকে তক্ষশীলায় পাঠানো হয়। সব শিল্পশাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করে তিনি বারাণসীতে ফিরে আসেন। পুত্রের সাফল্যে আনন্দিত হয়ে রাজা সকল বন্দিকে মুক্তি দেন। এরপর রাজকুমার জনসন্ধকে অভিষিক্ত করেন উপরাজপদে। তাঁর শাসনে রাজ্যের প্রজাবৃন্দ সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে থাকেন।
বোধিসত্ত্ব জনসন্ধের অভিষেকের কয়েক বছর পর রাজার মৃত্যু হয়। প্রজারা বোধিসত্ত্বকে রাজা নির্বাচন করেন। রাজা নগরের চার দ্বারে, মধ্যখানে ও রাজপ্রসাদের কাছে ছয়টি দানশালা নির্মাণ করে প্রতিদিন ছয় লক্ষ মুদ্রা দান দিতেন। রাজার এরকম মহাদান দেখে জম্বুদ্বীপবাসী বিস্মিত হন এবং রাজ্যের প্রজারা খুব সন্তুষ্ট হন। চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হতো না। কারাগার শূন্য হয়ে গেল।
বোধিসত্ত্ব পঞ্চশীল পালন করতেন। অষ্টমী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা-তিথিতে উপোসথশীল পালন করতেন। যথানিয়মে রাজ্য শাসন করতেন। রাজা প্রজাসাধারণকে সৎকার্য করায় ও সৎভাবে জীবনযাপনে উপদেশ দিতেন।
একদিন রাজা জনসন্ধ ভাবলেন, প্রজারা যাতে সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারেন, তাদের মঙ্গল সাধিত হয় এবং তারা যাতে অপ্রমত্তভাবে জীবন যাপন করেন, তাদের সে রকম কিছু উপদেশ দেব। তিনি ভেরি বাজিয়ে সমগ্র রাজ্যবাসীকে এক জায়গায় সমবেত করলেন। রাজা রাজ্যবাসীকে উদ্দেশ করে বললেন, প্রিয় রাজ্যবাসী! মনোযোগ দিয়ে আমার উপদেশ শোনো এবং সুষ্ঠুরূপে সেসব প্রতিপালন করবে।
১. বাল্যকালে বিদ্যাশিক্ষা করবে।
২. যৌবনকালে ধনসম্পদ উপার্জন করবে।
৩. কূটকর্ম ও কুপ্রবৃত্তি পরিত্যাগ করো।
৪. নিষ্ঠুর ও ক্রোধপরায়ণ হবে না।
৫. মাতা-পিতা ও গুরুজনের সেবা করবে।
৬. গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
৭. শ্রমণ-ব্রাহ্মণ ও সাধুব্যক্তিকে সম্মান ও গৌরব প্রদর্শন করবে।
৮. প্রাণিহত্যা ও হিংসা থেকে বিরত থাকবে।
৯. অকৃপণভাবে খাদ্যভোজ্য ও পানীয় সামগ্রী দান করবে।
১০. পরপুরুষ বা পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরদ্বার লঙ্ঘন করবে না। অপ্রমত্তভাবে দশধর্ম পালন করবে।
উপরের দশটি উপদেশকে 'দশ রাজধর্ম' বা 'দশবিধ কর্তব্য' বলা হয়। রাজা উক্ত দশ রকম উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও সৎভাবে জীবন যাপন করতেন এবং ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে রাজকাজ পরিচালনা করতেন।
সমবধান: আমি ছিলাম সে প্রাচীন রাজা জনসন্ধ এবং আমার শিষ্য প্রশিষ্য ছিল পারিষদবর্গ।
উপদেশ: রাজা ধার্মিক হলে প্রজারাও ধার্মিক হন।
Read more